রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনি | শ্রেষ্ঠত্বের কারণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ - ৭ আগস্ট ১৯৪১) ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রকর এবং দার্শনিক।
প্রাথমিক জীবন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। ঠাকুর পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও সাহিত্যকর্ম
রবীন্দ্রনাথ প্রথাগত শিক্ষার বাইরে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হন। লন্ডনে আইন পড়তে গেলেও তা অসম্পূর্ণ রেখে দেশে ফিরে আসেন এবং সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৭৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "কবি কাহিনী" প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি একের পর এক কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে "গীতাঞ্জলি," "সোনার তরী," এবং "বলাকা" উল্লেখযোগ্য। ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
সংগীত জীবন
রবীন্দ্রনাথের রচিত গানের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি, যা "রবীন্দ্র সংগীত" নামে পরিচিত। তাঁর গানে প্রকৃতি, প্রেম, ভক্তি, এবং মানবতার বিষয়বস্তু গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর রচিত "জনগণমন" এবং "আমার সোনার বাংলা" যথাক্রমে ভারতের এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।
শিক্ষা ও সমাজসেবা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা এবং সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রথাগত শিক্ষার বাইরে মুক্তচিন্তা এবং সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নতিতে গুরুত্ব দেয়।
আরো পড়ুনঃ কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনি
দর্শন ও রাজনীতি
রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চিন্তা এবং লেখনীতে মানবতা, সাম্য, এবং স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তোলেন এবং ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড খেতাব ত্যাগ করেন।
শেষ জীবন
জীবনের শেষ পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং মানবিক আদর্শ আজও বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কর্ম বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ, যা যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতির গৌরব ও প্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url