জ্বর হলে করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা

জ্বর হলো শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া, যা সাধারণত সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা শরীরে প্রদাহের প্রতিক্রিয়ায় ঘটে। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হয়। কিন্তু যখন তা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়, তখন তাকে জ্বর বলা হয়।

যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূচিপত্রঃ জ্বর হলে করণীয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা

জ্বর কেন হয় ?

জ্বর (fever) শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (immune system) একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত সংক্রমণ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার প্রতি সাড়া হিসেবে দেখা দেয়। জ্বর তখন হয় যখন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এর কয়েকটি সাধারণ কারণ হল:

  1. সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস বা পরজীবী সংক্রমণের ফলে জ্বর দেখা দিতে পারে। যেমন, সর্দি-কাশি, ফ্লু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি।

  2. ইনফ্লেমেশন (প্রদাহ): দেহের কোনো অঙ্গ বা টিস্যুতে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন হলে জ্বর হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আর্থ্রাইটিস বা অটোইমিউন রোগ উল্লেখ করা যেতে পারে।

  3. ওষুধের প্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ বা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও জ্বর হতে পারে।

  4. তাপমাত্রাজনিত কারণ: শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে, যেমন হিটস্ট্রোক হলে, শরীর তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করার জন্য জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।

  5. অপর্যাপ্ত হাইড্রেশন: শরীরে পানির অভাব হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানিশূন্যতা থাকলে জ্বর আসতে পারে।

জ্বর মূলত শরীরকে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বা সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ একটি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জ্বর হওয়ার লক্ষন 

জ্বর হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হল:

  1. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: সাধারণত ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি তাপমাত্রা।

  2. ঠান্ডা লাগা বা কাপুনি: জ্বর শুরু হলে অনেক সময় শরীর কাঁপতে থাকে বা ঠান্ডা লাগার অনুভূতি হয়।

  3. ঘাম হওয়া: তাপমাত্রা কমানোর জন্য শরীর থেকে ঘাম বেশি হতে পারে।

  4. মাথাব্যথা: জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় মাথাব্যথা হতে পারে।

  5. ক্লান্তি বা দুর্বলতা: জ্বর হলে শরীর দুর্বল বোধ করতে পারে এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।

  6. শরীরে ব্যথা: পেশী ও গিঁটে ব্যথা হতে পারে।

  7. ক্ষুধামন্দা: জ্বরের সময় ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

  8. গরম বা শুষ্ক ত্বক: ত্বক গরম ও শুষ্ক মনে হতে পারে।

  9. ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা): শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে গেলে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া বা মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া।

  10. বিরক্তি বা মন খারাপ: অনেক সময় জ্বরের কারণে মন খারাপ থাকতে পারে বা খিটখিটে মেজাজ দেখা দেয়।

যদি জ্বর বেশি দিন ধরে স্থায়ী হয় বা উপসর্গ খুবই গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জ্বর হলে প্রাথমিক করণীয়

জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। প্রাথমিক করণীয়গুলি হলো:

১. তাপমাত্রা পরীক্ষা করা

  • প্রথমে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন, যাতে বুঝতে পারেন জ্বর কতটা বেশি।

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম

  • শরীরকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দিতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর হলে শরীরের শক্তি কমে যায়, তাই বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পানি ও তরল গ্রহণ

  • জ্বরের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়, তাই ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, স্যুপ, ফলের রস, ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করতে হবে।

৪. হালকা খাবার খাওয়া

  • ক্ষুধা কম থাকলেও হালকা, পুষ্টিকর খাবার যেমন খিচুড়ি, স্যুপ, ফল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৫. ঠান্ডা পানির সেঁক

  • শরীরের তাপমাত্রা কমাতে গরম কাপড় সরিয়ে শরীরে হালকা ঠান্ডা পানির সেঁক দেওয়া যেতে পারে। তবে বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৬. ওষুধ সেবন (যদি প্রয়োজন হয়)

  • জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল বা অন্য জ্বর কমানোর ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্যান্য ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত।

৭. পরিবেশ শীতল রাখা

  • ঘর ঠান্ডা ও বায়ু চলাচল উপযুক্ত রাখুন। এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্যান ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৮. ওভারহিটিং এড়ানো

  • বেশি গরম কাপড় পরা বা খুব বেশি লেপ-কাঁথা ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

৯. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

  • যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, বমি, খিঁচুনি ইত্যাদি দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১০. জ্বরের কারণ চিহ্নিত করা

  • জ্বর ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল বা অন্য কোনো কারণে হচ্ছে কিনা তা চিহ

নিত করতে হবে। এটি জানার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

জ্বর এর ডাক্তারি চিকিৎসা

জ্বরের চিকিৎসা মূলত তার কারণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত জ্বর শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হলেও, দীর্ঘস্থায়ী বা উচ্চমাত্রার জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে জ্বরের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. জ্বরের কারণ নির্ণয়

  • জ্বর হলে প্রথমে চিকিৎসক জ্বরের কারণ নির্ণয় করেন। এজন্য রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হতে পারে। কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত না করলে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।

২. জ্বর কমানোর ওষুধ

  • সাধারণত প্যারাসিটামল (Acetaminophen) বা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) ব্যবহার করা হয় জ্বর কমানোর জন্য। এই ওষুধগুলো জ্বর কমানোর পাশাপাশি শরীরের ব্যথাও উপশম করে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ ঠিক করতে হয়।

৩. অ্যান্টিবায়োটিক (যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়)

  • যদি জ্বরের কারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।
  • তবে ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়, তাই এই ধরনের সংক্রমণে এড়িয়ে চলতে হবে।

৪. অ্যান্টিভাইরাল (ভাইরাল সংক্রমণ হলে)

  • কিছু ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে, যেমন ফ্লু বা ডেঙ্গু, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাল সংক্রমণ স্বাভাবিকভাবেই সেরে যায় এবং শুধুমাত্র উপসর্গের চিকিৎসা করা হয়।

5. ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে স্যালাইন

  • দীর্ঘদিনের জ্বরের কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এ অবস্থায় স্যালাইন বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) দিয়ে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে চিকিৎসা করা হয়।

৬. উপসর্গের চিকিৎসা

  • অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়।

৭. প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা

  • জ্বরের কারণ যদি গুরুতর কোনো রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় (যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড), তবে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করেন।

৮. হাসপাতালে ভর্তি (গুরুতর ক্ষেত্রে)

  • যদি জ্বর খুব বেশি হয়ে যায় বা রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়, তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে। যেমন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্লেটলেট সংখ্যা কমে গেলে বা নিউমোনিয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

জ্বর সাধারণত নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়, তবে যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি বা অত্যধিক দুর্বলতা, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রাথমিকভাবে জ্বর ভালো করার ঔষধসমূহ

জ্বর কমানোর জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু সাধারণ ঔষধ ও ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, জ্বরের কারণ বুঝে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কিছু সাধারণ ঔষধ ও পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

সাধারণ ঔষধ:

  1. প্যারাসিটামল (Paracetamol):

    • এটি জ্বর কমাতে ও শরীরের ব্যথা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
    • ডোজ: সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর প্রয়োজনমতো নেওয়া যায়, তবে দৈনিক সর্বোচ্চ ডোজ ৪ গ্রাম অতিক্রম করা উচিত নয়।
  2. ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen):

    • এটি প্যারাসিটামলের মতো জ্বর ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে এটি প্রদাহও কমাতে কার্যকর।
    • ডোজ: সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর নেওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক ডোজ ঠিক করা উচিত।
  3. এসপিরিন (Aspirin):

    • এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তবে শিশুদের দেওয়া উচিত নয়।
    • ডোজ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া উচিত।

ঘরোয়া পদ্ধতি:

  1. পানি পান করা: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি পান করা উচিত। এটি জ্বরের কারণে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি পূরণ করতে সাহায্য করে।

  2. লেবু ও মধুর শরবত: লেবু ও মধু মিশিয়ে শরবত পান করা শরীরকে ঠাণ্ডা করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

  3. সাধারণ বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করার জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন।

  4. কাপড় দিয়ে ঠাণ্ডা সেঁক: শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা:

  • যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি স্থায়ী হয়, অথবা ১০১°F (38.3°C) এর বেশি হয়, তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমাণমতো সেবন করা উচিত।

জ্বরের পেছনে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, তাই যদি ঘরোয়া উপায় ও সাধারণ ঔষধে কাজ না হয়, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

জ্বর হলে যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে 

জ্বর হলে কিছু কাজ ও অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলো জ্বরের উপসর্গকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বা শরীরের সুস্থতার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। নিচে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো যা জ্বর হলে এড়িয়ে চলা উচিত:

১. শরীরকে অতিরিক্ত গরম রাখা

  • অতিরিক্ত গরম কাপড় পরা বা কম্বলে মোড়ানো জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়াতে পারে।
  • বরং হালকা ও আরামদায়ক কাপড় পরা উচিত, যাতে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

২. গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক পরিশ্রম

  • জ্বরের সময় শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে, তাই ভারী কাজ বা ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত পরিশ্রম শরীরকে আরও দুর্বল করতে পারে।

৩. অপর্যাপ্ত পানি পান

  • জ্বরের সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি হারায়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। পানি কম পান করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা জ্বরের উপসর্গকে আরও খারাপ করতে পারে।

৪. ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করা

  • ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে। কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা বা শরীর মুছে দেওয়া উচিত।

৫. অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

  • চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া বা মশলাদার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো হজমে সমস্যা করতে পারে এবং শরীরকে আরও দুর্বল করতে পারে।
  • হালকা, সহজপাচ্য খাবার, যেমন খিচুড়ি, স্যুপ, ফলমূল খাওয়া উচিত।

৬. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান

  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে, যা জ্বরের সময় ক্ষতিকর হতে পারে। এসব পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।

৭. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা অবহেলা করা

  • যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন: শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা ঘন ঘন বমি, তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসা নিতে দেরি করা উচিত নয়।

৮. ধূমপান করা

  • ধূমপান শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। জ্বরের সময় ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।

৯. জনসমাগম বা বাইরে বের হওয়া

  • জ্বর হলে শরীর দুর্বল থাকে এবং অন্যদের মাঝে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বিশ্রাম নেওয়া এবং জনসমাগম বা বাইরে ঘোরাঘুরি করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে জ্বরের সময় শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

জ্বর হলে যে খাবার গুলো খাওয়া যাবেনা

জ্বরের সময় কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ সেগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা জ্বরের সময় এড়িয়ে চলা উচিত:

১. মশলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার

  • অতিরিক্ত মশলা, চর্বি ও তেলের খাবার হজমে সমস্যা করে এবং জ্বরের সময় পাকস্থলীর উপর চাপ বাড়ায়। যেমন:
    • ভাজাপোড়া খাবার (পকোড়া, চপ, সমুচা)
    • বেশি মশলাদার মাংস বা কাবাব
    • তেলেভাজা খাবার

২. দুগ্ধজাত খাবার (বেশি ভারী দুধ ও দই)

  • দুধ বা দইয়ের মতো ভারী দুগ্ধজাত খাবার জ্বরের সময় হজমে অসুবিধা করতে পারে, বিশেষ করে যখন পেটের সমস্যাও থাকে। তবে হালকা দুগ্ধজাত খাবার যেমন ঘোল বা পাতলা দই সামান্য পরিমাণে নেওয়া যেতে পারে।

৩. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়

  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে, যা জ্বরের সময় আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এসব পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত:
    • চা, কফি (ক্যাফেইনযুক্ত)
    • সফট ড্রিংকস
    • অ্যালকোহল

৪. ঠাণ্ডা ও প্রসেসড খাবার

  • ফ্রিজ থেকে সরাসরি ঠাণ্ডা খাবার বা প্রসেসড খাবার, যেমন আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয়, বা ফ্রোজেন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং গলা ও শ্বাসনালীর সমস্যা বাড়াতে পারে।

৫. মিষ্টিজাতীয় খাবার

  • বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ইনফেকশন কমিয়ে শরীরের সেরে ওঠার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেমন:
    • মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি
    • মিষ্টি পানীয় বা সোডা

৬. অপরিপক্ক ফল বা সবজি

  • কিছু অপরিপক্ক ফল বা সবজি খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কাঁচা সবজি বা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত যদি তা অপরিপক্ক হয় বা পরিষ্কারভাবে ধোয়া না হয়।

৭. খুব বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার

  • উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ব্রোকলি, বাঁধাকপি, বা অতিরিক্ত কাঁচা শাকসবজি জ্বরের সময় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

জ্বরের সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হালকা খাবার, যেমন স্যুপ, খিচুড়ি, সেদ্ধ করা সবজি ও ফলমূল শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url