বাংলাদেশের শেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে কাপ্তাই লেকের নৌবিহার, ঝুলন্ত সেতু, ও পাহাড়ি এলাকার সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।


বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ, যেখানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলোঃ

সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের শেরা দর্শনীয় স্থান

দর্শনীয় স্থান বলতে কি বোঝায় | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

"দর্শনীয় স্থান" বলতে এমন জায়গাগুলোকে বোঝায় যেগুলো বিশেষ সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক মূল্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, বা অন্যান্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য মানুষ দেখতে যায়। সাধারণত, দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এবং এসব স্থানে ভ্রমণ করে মানুষ আনন্দ, শিক্ষা, এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

দর্শনীয় স্থান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমনঃ
  1. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থানঃ পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, বন, নদী, জলপ্রপাত, হ্রদ ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বা সুন্দরবন।

  2. ঐতিহাসিক স্থানঃ প্রাচীন নিদর্শন, দুর্গ, মন্দির, মসজিদ, প্রাসাদ ইত্যাদি যা ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে। উদাহরণস্বরূপ, মহাস্থানগড়, আহসান মঞ্জিল।

  3. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্থানঃ যেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় বা সংস্কৃতির নিদর্শন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, পহাড়পুর বিহার।

  4. প্রাণীজ ও উদ্ভিদ উদ্যানঃ যেখানে বিশেষ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, চিড়িয়াখানা, উদ্যান।

  5. বিনোদনমূলক স্থানঃ থিম পার্ক, মিউজিয়াম, গ্যালারি, যেগুলোতে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় উপাদানও থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

এগুলো স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান, যেগুলো দেখতে মানুষ ভ্রমণ করে।

বাংলাদেশের শেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ

বাংলাদেশে অনেক চমৎকার দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা প্রকৃতি, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। বাংলাদেশের সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

  • বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, যা প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
  • এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য এবং বালির উপর হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায়।

২. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

  • বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা বঙ্গোপসাগরের নীল জলে ঘেরা।
  • পরিষ্কার নীল জল, প্রবাল এবং সামুদ্রিক প্রাণী দেখে মুগ্ধ হওয়ার মতো স্থান।

৩. সুন্দরবন

  • বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল।
  • ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।

৪. বান্দরবান

  • পাহাড়ি অঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
  • এখানে নীলগিরি, নীলাচল, বগা লেক, আর কেওক্রাডং পাহাড়সহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।

৫. রাঙ্গামাটি

  • এটি চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের একটি সুন্দর জেলা।
  • কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত সেতু, এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার স্থান।

৬. সিলেট

  • চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এবং জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
  • লালাখাল নদীর নীল জল এবং মাধবকুন্ড জলপ্রপাত পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

৭. পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

  • একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
  • প্রাচীন স্থাপত্য ও ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

৮. মহাস্থানগড়

  • বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরী হিসেবে পরিচিত।
  • বগুড়া জেলার এই স্থানটি প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

৯. সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর

  • বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী হিসেবে পরিচিত।
  • এখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, স্থাপত্য, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত রয়েছে।

১০. জাতীয় স্মৃতিসৌধ

  • সাভারে অবস্থিত এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান।

১১. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)

  • সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ক্যাম্পাসগুলোর একটি।

১২. পদ্মা সেতু

  • বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রকল্প, যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ সুগম করেছে।
  • পদ্মা নদীর উপর এই সেতুর সৌন্দর্যও চমৎকার।
এই স্থানগুলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি, যা দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

কক্সবাজার এর দর্শনীয় স্থানসমূহ | বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার শুধু তার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের জন্যই নয়, বরং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর জন্যও বিখ্যাত। কক্সবাজারে ভ্রমণ করলে নিচের স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেনঃ

১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

  • বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
  • এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • সৈকতের বালিতে হাঁটা, সমুদ্রস্নান, এবং নানান জলক্রীড়া করার সুযোগ রয়েছে।

২. হিমছড়ি জলপ্রপাত এবং হিমছড়ি পাহাড়

  • কক্সবাজার থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে সমুদ্রের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
  • হিমছড়ি জলপ্রপাতের শীতল পানি এবং আশেপাশের সবুজায়ন খুবই আকর্ষণীয়।

৩. ইনানি সৈকত

  • কক্সবাজার থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
  • পরিচ্ছন্ন বালি এবং পরিষ্কার নীল জলের জন্য বিখ্যাত।
  • সমুদ্র সৈকতে ছোট ছোট প্রবাল এবং পাথরের গঠন একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

৪. মহেশখালী দ্বীপ

  • কক্সবাজার থেকে নৌকা বা ট্রলারের মাধ্যমে পৌঁছানো যায়।
  • এখানে প্রাচীন আদিনাথ মন্দির এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন উপাসনালয় রয়েছে।
  • দ্বীপের পাহাড়ি এলাকা এবং ম্যানগ্রোভ বন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।

৫. রামু বৌদ্ধ বিহার

  • কক্সবাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
  • এখানে বড় বড় বৌদ্ধ মন্দির এবং প্যাগোডা দেখা যায়।
  • রামুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি রয়েছে যা স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।

৬. শিল্পী পল্লী (পাবলিক লাইব্রেরি)

  • স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি করা হস্তশিল্প, চিত্রকর্ম এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক আইটেম দেখার জন্য একটি চমৎকার জায়গা।
  • কক্সবাজারের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পাওয়া যায়।

৭. ডালফিন মোড় এবং কলাতলী সৈকত

  • কক্সবাজার শহরের কাছেই অবস্থিত।
  • এই এলাকাটি তার ডাইনিং স্পট, দোকানপাট এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগের জন্য বিখ্যাত।

৮. পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

  • চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি অবস্থিত হলেও কক্সবাজার ভ্রমণের সময় পর্যটকরা একে দেখতে আসেন।
  • কক্সবাজার থেকে সহজে যাওয়া যায় এবং চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের একটি অংশ হিসেবে পরিচিত।

৯. বদর মোকাম (মহেশখালী দ্বীপে)

  • এই পবিত্র স্থানটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
  • বদর মোকাম মসজিদে পর্যটকরা প্রার্থনা করতে এবং আশেপাশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন।

১০. কুতুবদিয়া দ্বীপ

  • কক্সবাজার থেকে নৌকা বা ট্রলার দ্বারা পৌঁছানো যায়।
  • এ দ্বীপে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন মসজিদ, এবং বাতিঘর।
কক্সবাজারের এসব দর্শনীয় স্থান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং ধর্মীয় ইতিহাসের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ, যা পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে এবং তাদের ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তোলে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url