ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস মম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | Doctor Muhammad Yunus

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস একজন বিখ্যাত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ধারণা প্রচলন করেন, যা দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে। এই উদ্যোগের জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।


ডাক্তার ইউনুসের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৮ জুন, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার উদ্যোগে গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংক আজ সারা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠেছে।

সূচিপত্রঃ ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস(Doctor Muhammad Yunus)

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর বাল্যকাল((Doctor Muhammad Yunus)

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুসের বাল্যকাল চট্টগ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে কাটে। তাঁর বাবা হাজী দীন মোহাম্মদ ছিলেন একজন স্বর্ণকার, এবং মা সাফিয়া খাতুন ছিলেন একজন সমাজসেবিকা। তাঁর পরিবারে শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল, যা তাঁর ভবিষ্যত জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
শৈশব থেকেই ড. ইউনুস ছিলেন মেধাবী ও শিক্ষানুরাগী। তিনি চট্টগ্রামের লামাবাজার প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। শৈশব থেকেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন, যা তাঁর সমাজসেবার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে।

আরো পড়ুনঃ Doctor Muhammad Yunus  এর CV

ড. ইউনুসের শৈশবের এই অভিজ্ঞতাগুলি পরবর্তীতে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর যৌবনকাল(Doctor Muhammad Yunus)

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুসের যৌবনকাল ছিল শিক্ষা, গবেষণা, ও সমাজসেবার প্রতি গভীর উৎসর্গের সময়। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পিএইচডি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ১৯৬৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

পিএইচডি অর্জনের পর, ড. ইউনুস টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে, তিনি সক্রিয়ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠিত করে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আরো পড়ুনঃ কাজী নজরুল আসলামের জীবনি

যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি গ্রামীণ এলাকার দারিদ্র্য এবং অনাহার দেখে খুবই মর্মাহত হন, যা তাঁকে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নতুন ধারণা ও পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

এই সময়েই তিনি ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, যা পরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। তাঁর যৌবনকালই তাঁকে একজন সমাজসেবক ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর গুরুত্বপূর্ন লিখাসমূহ

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস একজন প্রখ্যাত লেখক হিসেবেও পরিচিত। তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনীতি, সমাজ উন্নয়ন, এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বইগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। এখানে তাঁর কিছু প্রধান লেখার তালিকা দেওয়া হলোঃ

১. Banker to the Poor: Micro-Lending and the Battle Against World Poverty
  • এই বইটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি ড. ইউনুসের আত্মজীবনীমূলক লেখা। এখানে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
২. Creating a World Without Poverty: Social Business and the Future of Capitalism
  • এই বইটিতে ড. ইউনুস "সোশ্যাল বিজনেস" বা সামাজিক ব্যবসার ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ব্যবসা শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের জন্য নয়, বরং সমাজের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. Building Social Business: The New Kind of Capitalism that Serves Humanity's Most Pressing Needs
  • ২০১০ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে ড. ইউনুস সামাজিক ব্যবসার কাঠামো ও বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটি সামাজিক ব্যবসা নিয়ে তার ভাবনা ও অভিজ্ঞতার আরও বিস্তৃত বিবরণ দেয়।
৪. A World of Three Zeros: The New Economics of Zero Poverty, Zero Unemployment, and Zero Carbon Emissions
  • ২০১৭ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে ড. ইউনুস ভবিষ্যতের একটি পৃথিবীর চিত্র তুলে ধরেছেন যেখানে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ নেই। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
৫. Whither Capitalism?
  • ২০২৩ সালে প্রকাশিত এই বইতে, ড. ইউনুস বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং এর বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে এর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
ড. ইউনুসের লেখাগুলি শুধু অর্থনীতির ছাত্রদের জন্যই নয়, বরং যে কেউ সমাজ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর ভ্রমনকৃত দেশসমূহঃ

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন, তবে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, এবং মিটিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার প্রচারণা এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ করার জন্যও তিনি বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন।
তাঁর ভ্রমণ বিভিন্ন মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে বিস্তৃত, যেখানে তিনি সরকারের প্রধান, ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি যে কিছু প্রধান দেশগুলো সফর করেছেন তার মধ্যে রয়েছেঃ
  1. যুক্তরাষ্ট্র
  2. যুক্তরাজ্য
  3. জার্মানি
  4. ফ্রান্স
  5. জাপান
  6. ভারত
  7. চীন
  8. অস্ট্রেলিয়া
  9. কানাডা
  10. নরওয়ে
  11. সুইডেন
  12. দক্ষিণ আফ্রিকা
  13. মালয়েশিয়া
  14. দক্ষিণ কোরিয়া
  15. মেক্সিকো
এছাড়াও, তিনি আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন। তার এই ভ্রমণগুলো মূলত ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ক কাজের প্রসারে কেন্দ্রীভূত ছিল।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস কেন বিখ্যাত ছিলেন?

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস প্রধানত দুই কারণে বিখ্যাতঃ
১. গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণা
  • ড. ইউনুস ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যাংকটি দরিদ্র মানুষের জন্য অল্প সুদে ঋণ প্রদান করে, যাতে তারা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। এই ধারণাটি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি নতুন মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
২. নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬)
  • ২০০৬ সালে ডক্টর ইউনুস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটি ছিল তার জীবনের অন্যতম বৃহৎ স্বীকৃতি এবং তার কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।

আরো পড়ুনঃ রবিন্দ্রনাত ঠাকুর এর জীবনি

এই দুইটি প্রধান কারণেই ডক্টর ইউনুস বিশ্বজুড়ে পরিচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ব্যবসার কাজ পৃথিবীজুড়ে এক নতুন পথ তৈরি করেছে।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর জীবনে অর্জিত নবেলসমূহঃ



ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস তার জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৬ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। এই পুরস্কারটি তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে লাভ করেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার ছাড়াও তিনি আরও অনেক সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

১. নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬)
  • ড. ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার প্রবর্তনের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম বৃহৎ অর্জন।
২. প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (২০০৯)
  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ড. ইউনুসকে এই পুরস্কার প্রদান করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত।
৩. কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল (২০১৩)
  • যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলোর একটি।
৪. ইন্ডিয়ান civilian awards
  • ভারত সরকার ড. ইউনুসকে “ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার” প্রদান করেছে, যা শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ, এবং উন্নয়নের জন্য প্রদান করা হয়।
৫. বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সম্মাননা
  • ড. ইউনুস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি এবং অন্যান্য বহু পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের "স্বাধীনতা পুরস্কার," এবং ফ্রান্সের "লিজিয়ন অব অনার।"
ড. ইউনুসের এইসব পুরস্কার ও সম্মাননা তাঁর কর্মের বিশ্বব্যাপী প্রভাবের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস যে কয়টি ভাষা জানেনঃ

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস প্রধানত দুটি ভাষায় পারদর্শীঃ
  1. বাংলা - তাঁর মাতৃভাষা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা।
  1. ইংরেজি - যা তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যবহার করেন এবং লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ড. ইউনুসের অধিকাংশ বক্তৃতা, বই এবং অন্যান্য লেখালেখি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে, তবে তিনি বাংলা ভাষায়ও কথা বলেন এবং লেখেন। এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফর এবং কাজের কারণে তিনি অন্যান্য কিছু ভাষা বুঝতে পারেন বা মৌলিক পর্যায়ে যোগাযোগ করতে পারেন, তবে তিনি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেই সবচেয়ে বেশি সাবলীল।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর বর্তমান জীবন?

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস বর্তমানে একটি গ্লোবাল সামাজিক ব্যবসা ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচারক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বক্তৃতা দেন এবং বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার ধারণা প্রসারিত করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে তাঁর কিছু প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:

১. সামাজিক ব্যবসা ও গ্রামীণ ব্যাংক

  • ড. ইউনুস সামাজিক ব্যবসার ধারণা ও গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল নিয়ে কাজ করছেন। যদিও গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, তার প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য তিনি কাজ করছেন।

২. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

  • তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, ও ফাউন্ডেশনগুলির সাথে কাজ করছেন। তাঁর উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক ব্যবসার প্রচার, এবং বৈশ্বিক আর্থিক ন্যায়বিচার।

৩. লেখালেখি ও বক্তৃতা

  • ড. ইউনুস তার বই লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। তাঁর কাজের প্রভাব এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে তিনি নানা ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

৪. অন্য সামাজিক প্রকল্প

  • তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করেন এবং নতুন উদ্যোগের পরিকল্পনা করেন যা সমাজের নানান সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
ড. ইউনুসের জীবন এখনো সমাজ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং সামাজিক ব্যবসার প্রচার করতে নিবেদিত। তিনি একজন সক্রিয় সমাজসেবক এবং তার কাজ বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য ও আর্থিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুস এর জীবন থেকে শিক্ষাঃ(Doctor Muhammad Yunus)

ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনুসের জীবন ও কাজ আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। তাঁর জীবন ও কাজের মাধ্যমে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তা নিম্নরূপঃ

১. দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা

  • ড. ইউনুস প্রমাণ করেছেন যে দারিদ্র্য বিমোচন শুধুমাত্র সরকারি বা দাতব্য সাহায্যের মাধ্যমে সম্ভব নয়; উদ্ভাবনী চিন্তা ও কার্যকরী মডেল তৈরির মাধ্যমে অনেক বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

২. সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব

  • সামাজিক ব্যবসার ধারণা আমাদের শেখায় যে ব্যবসা শুধুমাত্র লাভের জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যাগুলি সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায় এবং এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।

৩. নিরন্তর প্রচেষ্টা ও উদ্যম

  • ড. ইউনুসের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আমাদের শেখায় যে কোনো বড় লক্ষ্য অর্জনে কঠোর পরিশ্রম এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা অপরিহার্য। তিনি অনেক বাধা সত্ত্বেও তার স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করেছেন এবং সফল হয়েছেন।

৪. ক্ষমতায়ন ও সুযোগের উন্নয়ন

  • তাঁর কাজ দেখিয়েছে যে, দরিদ্র মানুষদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা মানুষের আত্মনির্ভরতা এবং স্বনির্ভরতা তৈরি করতে সহায়ক।

৫. নৈতিকতা ও মানবিকতা

  • ড. ইউনুসের কাজ তার নৈতিকতা ও মানবিকতার পরিচায়ক। তিনি সব সময় সমাজের দুর্বল অংশের জন্য কাজ করেছেন এবং তাদের উন্নয়ন ও কল্যাণে মনোযোগ দিয়েছেন।

৬. প্রভাবশালী নেতৃত্ব

  • তাঁর নেতৃত্ব ও দৃঢ়তা প্রমাণ করে যে, একজন নেতৃত্বদানকারী মানুষ কীভাবে একটি নতুন ধারণা গ্রহণ করে এবং তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হতে পারে।
ড. ইউনুসের জীবন আমাদের শেখায় যে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, কঠোর পরিশ্রম, এবং মানবিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করলে সমাজে গভীর পরিবর্তন আনা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url