বিকাশ অ্যাকিউন্ট করা ও বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়ার সহজ উপায়

"বিকাশ" একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যা বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রচলিত। এটি মূলত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা প্রদান করে।

বিকাশ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি শুধুমাত্র টাকা পাঠানো বা পেমেন্ট করাই নয়, বরং আর্থিক সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্যও নিশ্চিত করছে। আরো বিস্তারিত নিন্মে আলোচনা করা হলো!

সূচিপত্রঃ বিকাশ অ্যাকিউন্ট করা ও বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়ার

বিকাশ কি? বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়ার সহজ উপায়

বিকাশ একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যা বাংলাদেশে প্রচলিত এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা প্রদান করে। ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক এবং Money in Motion LLC এর উদ্যোগে বিকাশ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি বাংলাদেশে অন্যতম বৃহত্তম মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম।

বিকাশ অ্যাকাউট করার নিয়ম

বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা বেশ সহজ এবং সরাসরি একটি প্রক্রিয়া। আপনি আপনার মোবাইল ফোন থেকে সহজেই একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। নিচে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপগুলি উল্লেখ করা হলোঃ

বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপসমূহঃ

১. মোবাইল ফোন প্রস্তুত করুনঃ

  • যে মোবাইল নম্বরটি দিয়ে আপনি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে চান সেটি নিশ্চিত করুন।
  • বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে আপনার মোবাইল নম্বরটি অবশ্যই আপনার নিজের নামে নিবন্ধিত থাকতে হবে।

২. USSD কোড ডায়াল করুনঃ

  • আপনার মোবাইল ফোন থেকে *247# ডায়াল করুন।

৩. অ্যাকাউন্ট খোলার অপশন নির্বাচন করুনঃ

  • মেনু থেকে ১ নম্বর অপশন ("খুলুন বিকাশ অ্যাকাউন্ট") নির্বাচন করুন এবং তারপর "Send" বাটনে চাপুন।

৪. প্রয়োজনীয় তথ্য দিনঃ

  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্মতারিখ দিন।
  • পরবর্তী ধাপে আপনার নাম এবং অন্যান্য তথ্য দিন।

৫. পিন কোড সেট করুনঃ

  • একটি নিরাপদ চার ডিজিটের পিন কোড সেট করুন, যা আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে লেনদেন করার সময় ব্যবহার হবে।
  • নিশ্চিত করুন যে পিন কোডটি নিরাপদ এবং সহজে অনুমান করা যায় না।

৬. অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশনঃ

  • প্রাথমিকভাবে আপনি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, তবে সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় করতে নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
  • বিকাশ এজেন্টের কাছে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি এবং মোবাইল নম্বর সহ উপস্থিত হোন।

৭. অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করুনঃ

  • এজেন্টের কাছ থেকে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় হবে এবং আপনি সকল ধরনের সেবা নিতে পারবেন।

বিকল্প পদ্ধতি: বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা

  1. বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোডঃ আপনার স্মার্টফোনে বিকাশ অ্যাপ (Google Play Store বা Apple App Store থেকে) ডাউনলোড করুন।
  2. অ্যাপ ইনস্টল এবং ওপেন করুনঃ অ্যাপটি ইনস্টল করার পর ওপেন করুন।
  3. রেজিস্ট্রেশন করুনঃ অ্যাপে "Sign Up" বা "Register" অপশনে ক্লিক করুন।
  4. ব্যক্তিগত তথ্য দিনঃ নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্য দিন।
  5. পিন কোড সেট করুনঃ একটি নিরাপদ চার ডিজিটের পিন কোড সেট করুন।
  6. ভেরিফিকেশন করুনঃ মোবাইল নম্বরে প্রেরিত OTP (One-Time Password) দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
এভাবে সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করে আপনি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুত, নিরাপদ এবং সহজে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন। বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনি টাকা পাঠানো, পেমেন্ট করা, বিল পরিশোধ করা, মোবাইল রিচার্জ করা ইত্যাদি কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন।

বিকাশ এর সেবাসমূহ | বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়ার সহজ উপায়

বিকাশ বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) যা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুত এবং নিরাপদে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে। বিকাশের বিভিন্ন সেবা রয়েছে, যা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক লেনদেনকে সহজ করে তুলেছে। নিচে বিকাশের প্রধান সেবাসমূহের বিবরণ দেওয়া হলোঃ

বিকাশের প্রধান সেবাসমূহঃ

১. টাকা পাঠানো (Send Money):

  • বিকাশ থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে সহজেই টাকা পাঠানো যায়। এটি এক মুহূর্তে অন্য কারও বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করতে সাহায্য করে।

২. ক্যাশ আউট (Cash Out):

  • বিকাশের মাধ্যমে যে কোনো এজেন্ট পয়েন্ট বা ATM থেকে সহজেই টাকা উত্তোলন করা যায়। এটির জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য।

৩. বিল পরিশোধ (Bill Payment):

  • বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায় বিকাশের মাধ্যমে। গ্রাহকরা ঘরে বসেই তাদের সব বিল পরিশোধ করতে পারেন।

৪. মোবাইল রিচার্জ (Mobile Recharge):

  • বিকাশ ব্যবহার করে যে কোনো মোবাইল অপারেটরের জন্য মোবাইল রিচার্জ করা যায়। এটি খুব সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি।

৫. পেমেন্ট (Payment):

  • দোকান, রেস্তোরাঁ, সুপারমার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট করা যায়। QR কোড স্ক্যান করে বা মেন্যু থেকে পেমেন্ট করা যায়।

৬. সেলারি ডিসবার্সমেন্ট (Salary Disbursement):

  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে তাদের কর্মচারীদের বেতন প্রদান করতে পারে। এটি সময় ও খরচ সাশ্রয়ী এবং সহজ পদ্ধতি।

৭. রেমিট্যান্স সেবা (Remittance Services):

  • প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিকাশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দেশে সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন। এই অর্থ সরাসরি বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

৮. সঞ্চয় সেবা (Savings):

  • বিকাশ সঞ্চয় সেবা প্রদান করে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় করতে পারেন এবং একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

৯. লোন (Loan):

  • বিকাশ কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে গ্রাহকদের ছোট অংকের লোন গ্রহণের সুযোগ দেয়।

১০. ইনস্যুরেন্স (Insurance):

  • বিকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বীমা, দুর্ঘটনা বীমা ইত্যাদি ইনস্যুরেন্স পলিসি গ্রহণ করা যায়।

১১. গেমস ও অ্যাপ পেমেন্ট (Games and App Payment):

  • বিকাশ ব্যবহার করে বিভিন্ন গেমস এবং অ্যাপের জন্য পেমেন্ট করা যায়। এটি গেমারদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক।

১২. ই-কমার্স পেমেন্ট (E-commerce Payment):

  • অনলাইন কেনাকাটার সময় বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে সহজে পেমেন্ট করা যায়।

বিকাশের এই সেবাগুলি ব্যবহার করে গ্রাহকরা তাদের দৈনন্দিন আর্থিক কাজকর্ম খুব সহজে ও নিরাপদে সম্পন্ন করতে পারেন। এভাবে বিকাশ বাংলাদেশে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য এবং সহজ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

বিকাশ থেকে টাকা লোন নেওয়ার নিয়ম

বিকাশ থেকে সরাসরি টাকা লোন নেওয়ার সেবা বর্তমানে সীমিত আকারে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে প্রদান করা হচ্ছে। বিকাশের এই লোন সেবা সাধারণত "মাইক্রো লোন" হিসেবে পরিচিত, যা মূলত স্বল্প অংকের লোন প্রদান করে। এই ধরনের লোন পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।

বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া:

১. লোন প্রাপ্তির যোগ্যতাঃ

  • বিকাশ থেকে লোন পেতে হলে আপনার একটি সক্রিয় বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
  • নিয়মিত লেনদেনের একটি ভাল ইতিহাস থাকা জরুরি।
  • কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ থাকতে হবে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হতে হবে (যেমন সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ইত্যাদি)।

২. লোন অফার পাওয়াঃ

  • যোগ্য গ্রাহকরা বিকাশ অ্যাপ বা *247# USSD কোড ব্যবহার করে লোন অফার চেক করতে পারেন।
  • বিকাশ অ্যাপের "Loan" সেকশন বা USSD মেনুতে "লোন" অপশন দেখতে পারেন।

৩. লোন আবেদন করাঃ

  • বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন এবং "Loan" সেকশনে যান।
  • অফার পাওয়া গেলে, "Apply for Loan" অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনাকে কত টাকা লোন নিতে চান এবং কতোদিনের জন্য তা নির্বাচন করতে বলা হবে।

৪. লোনের শর্তাবলীঃ

  • লোনের মেয়াদ ও ইন্টারেস্ট রেট (সুদ) সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য প্রদর্শিত হবে। সাধারণত লোনের মেয়াদ ৩০ দিন এবং সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে।
  • শর্তাবলী গ্রহণ করলে আবেদন সাবমিট করুন।

৫. লোন অনুমোদন ও টাকা প্রাপ্তিঃ

  • আবেদন সাবমিট করার পর বিকাশ এবং সহযোগী ব্যাংক/অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে।
  • অনুমোদিত হলে লোনের অর্থ সরাসরি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

৬. লোন পরিশোধ (Repayment):

  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লোনের অর্থ ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। আপনি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি লোন পরিশোধ করতে পারেন।
  • বিকাশ অ্যাপ বা *247# ব্যবহার করে পরিশোধের অপশন দেখতে পারবেন।

দ্রষ্টব্য:

  • বিকাশ থেকে লোন সেবা সকল গ্রাহকদের জন্য উপলব্ধ নয়। এটি প্রাথমিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট গ্রাহকের জন্য চালু করা হয়েছে এবং সময়ের সাথে সাথে এর সুযোগসুবিধা বাড়ানো হতে পারে।
  • বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার আগে সুদের হার, সময়সীমা, এবং অন্যান্য শর্তাবলী ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত।
  • নির্ধারিত সময়ে লোন পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত ফি বা জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে এবং এর ফলে আপনার ক্রেডিট ইতিহাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বিকাশ থেকে লোন নেওয়া খুবই সহজ ও সোজা প্রক্রিয়া। তবে, লোন নেয়ার আগে এর শর্তাবলী এবং পরিশোধের সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনো আর্থিক অসুবিধায় পড়তে না হয়।

বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার নিয়ম

বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার পদক্ষেপগুলি সাধারণভাবে এভাবে হয়ঃ

  1. বিকাশ অ্যাপ খোলুনঃ প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাপটি খুলুন।

  2. বিদ্যুৎ বিল অপশনঃ মেনু থেকে "বিদ্যুৎ" বা "বিল পে" অপশনটি সিলেক্ট করুন।

  3. বিল পরিশোধ করুনঃ আপনার বিদ্যুৎ বিলের বিশদ প্রদান করুন এবং পরিমাণ যেমন লিখুন। তারপর পেমেন্ট করুন আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে।

  4. সম্পূর্ণ হয়ে গেলোঃ পেমেন্ট সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, আপনার এক্ষেত্রে বিকাশ থেকে একটি রশিদ পাওয়া যায় যা আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন বা প্রয়োজনে মন্তব্য করতে পারেন।

এটি সাধারণভাবে পদক্ষেপগুলি যা আপনাকে বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সাথে সহায়তা করতে পারে। তবে, বিশেষ বিস্তারিত নিয়ম ও শর্তাদি আপনার বিকাশ অ্যাপে বা ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকতে পারে যেন আপনি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url